কম খরচে পশ্চিমবঙ্গের জনপ্রিয় ঘোরার জায়গা

 

কম খরচে পশ্চিমবঙ্গের জনপ্রিয় ঘোরার জায়গা

কম খরচে পশ্চিমবঙ্গের জনপ্রিয় ঘোরার জায়গা

বহু দিন ধরে বহু ক্রোশ দূরে

বহু ব্যয় করি বহু দেশ ঘুরে

 দেখিতে গিয়েছি পর্বতমালা,

ভ্রমণ পিপাসু বিশ্ব বরণ্য বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর লেখনী শক্তিতে স্পষ্টতঃ ভ্রমণ সমালোচিত নিজের ভ্রমণ অভিজ্ঞতা। তিনি অনেক দিন ধরে অনেক দেশ দেখেছেন পর্বতমালা ইত্যাদি। কম খরচে পশ্চিমবঙ্গের জনপ্রিয় ঘোরার জায়গা-



সুন্দরবন

সুন্দরবন হলো ভারতের সর্ব বৃহৎ ম্যানগ্রোভ বনভূমি। পশ্চিমবঙ্গের ঘোরার জায়গা এটি ভারত তথা বাংলাদেশ জুড়ে বিস্তৃত বিশাল ম্যানগ্রোভ বনভূমি।  কলকাতার কাছাকাছি অফবিট জায়গা সুন্দরী গাছের অধিককের ফলে সম্ভবত এর নামকরণ করা হয়েছে সুন্দরবন।  শুধু এই গাছে মনোরঞ্জন নয় এখানে ভ্রমণের জন্য আরো সুন্দর সুন্দর জিনিস আছে।  

প্রাকৃতিক বন,এর মাঝে সুন্দর পশু পাখি যা দেখার মতো   গায়ে চোকা চোকা দাগ বিভিন্ন প্রজাতির হরিণ, বন্য শিয়াল , চিতাবাঘ , পৃথিবী বিখ্যাত পশ্চিমবঙ্গের দর্শনীয় স্থান সুন্দরবনের রয়েল বেঙ্গল টাইগার ", এবং বনাঞ্চল কে ঘিরে , আঁকা বাঁকা নদী   নালা প্রবাহিত হয়েছে।  যেখানে আছে নদীর কুমির , গোসাপ , কাঁকড়া ইত্যাদি যা ভ্রমণ পিপাসু মানুষ জন্য মুগ্ধকর। 

ভ্রমণের উপযুক্ত সময়

এই মনোমুগ্ধকর পরিবেশ উপভাগ করার জন্য বিশেষত শীতকালে যথেষ্ট।  নদীর  উষ্ণ  প্রবাহিত হয়।  এই ঋতু ছাড়া গ্রীষ্ম বর্ষাকাল একটু বিপদজনক হয়ে পরে নদীর উত্তাল ঢেউ।

সতর্কতা

কম খরচে পশ্চিমবঙ্গের জনপ্রিয় ঘোরার জায়গা সুন্দরবন যেহেতু বিস্তীর্ণ বনাঞ্চল উপদেশ তাই এখানে স্থলপথে এবং জলপথে বিভিন্ন হিংস্র পশু পাখি জানোয়ার এর  অবস্থান তাই এখানে সতর্কতা থাকায় শ্রেয় কি কি করণীয় -

   . নদীতে ঘোরার সময় জলে পা না ডোবানো ভালো

  . বনভূমি তে যেখানে সেখানে নেমে ঘোরাঘুরি না করাই ভালো

 . সন্ধ্যার পর না ঘুরাঘুরি করা ভালো। 

 .  সবসময় দলবদ্ধ  ভাবে থাকা ভালো।




মুর্শিদাবাদ

মুর্শিদাবাদ হলো ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের একটি অন্যতম ঐতিহাসিক স্থান। এখানকার নাম শুনলে মনে পড়ে যায় ইতিহাস পড়ার ঘটনা  একের পর এক , বাংলার নবাব , রাজা মহারাজা , সেনাপ্রধান , ইংরেজ দের সাথে যুদ্ধ এবং জায়গার অবস্থান গুলি। মুর্শিদাবাদ হোলো ঐতিহাসিক দার্শনিক শিক্ষাক্ষামূলক ভ্রমণ স্থান। এখানকার বিশেষ কয়েকটি স্থান নিচে বর্ণনা করবো –

১. হাজার দুয়ারী

হাজার দুয়ারী হলো অতি প্রাচীন একটি রাজ প্রসাদ , এই প্রাসাদে হাজার টি দরজা আছে বলে জানা যায়।  যদি ও নাকি এর কিছু দরজা নকল।  যদি ও এই প্রাসাদ টি সরকারি আওতায় জাদুঘর হিসাবে সংরক্ষিত করা হয়েছে। কম খরচে ঘোরার জায়গা যার প্রবেশ মূল্য ভারতীয়দের জন্য ৫ রুপি এবং বিদেশিদের জন্য ২০০ রুপি ধার্য মূল্য নেয়া হয়।  এই স্থান টি দেখার জন্য সবথেকে কম ২৪০ মিনিট সময় লাগবে ।

২. কাশিমবাজার  রাজবাড়ী

কাশীবাজার রাজবাড়ী হলো ঊনবিংশ শতাব্দীতে তৈরী করা হয়েছিল বলে জানা যায়।  এই রাজবাড়িটি ইউরোপ ও ভারতের সংমিশ্রিত একটি নির্মাণ যা এখন আধুনিক প্রেমের নিদর্শন ভ্রমণ স্থান।  এখানে আসলে অনেক কিছু দেখতে পাবেন , প্রাচীন যুদ্ধের বিভিন্ন অস্ত্র সস্ত্র , এখানকার লক্ষি মন্দির প্রধান আকর্ষণীয় স্থান। এখানে আসলে আফ্রিকান নাগলিঙ্গম একটি সুন্দর গাছ দেখতে পারবেন যার সুবাস বিকশিত করে।

৩. ইমামবাড়া

ভারত তথা বাংলার অন্যতম স্থাপত্য হলো ইমামবাড়া। এটির স্থাপত্য হয় ১৮৪৭ সালে স্থাপিত হয়।  নবাব নাজিম মনসুর আলী খাঁন ফেরাদুন জাহ দ্বারা নির্মিত।  এর দৈর্ঘ ৬৮০ ফুট ও কেন্দ্রীয় ব্লকের প্রস্ত ৩০০ ফুট।  এটি নবাব সিরাজ উদ দৌলা নির্মিত পুরাতন ইমাম বাড়া ধ্বংসের পর নির্মিত হয়েছিল।  এই স্থাপত্যটি ভারত তথা বাংলার বৃহত্তম স্থান।

    এছাড়া ও মুর্শিদাবাদের বিভিন্ন ঐতিহাসিক ভ্রমণ স্থান  গুলি হল - মতিঝিল, জগৎশেঠের বাড়ি,  কাঠগোলাপের বাগান বাড়ি , নশিপুর রাজবাড়ী , চান্দার রথ, কাঠরা  মসজিদ, জাহানকোষ কামান , নবাব সিরাজ উদ দৌলার সমাধি ,  আদিনাথ মন্দির , ঘড়িমিনার , জাফর গঞ্জের সেমেট্রি , খোশবাগ , নশিপুর প্রাসাদ , ইত্যাদি ঐতিহাসিক দর্শনীয় স্থান ছাত্র ছাত্রী থেকে শুরু করে সমাজের প্রতিটি মানুষের দেখার মতো জায়গা। 




কালিম্পং

কালিম্পং  হলো দার্জিলিঙের ঠিক ৫০ কিলোমিটার আগে ছোট একটি শহর। পশ্চিমবঙ্গের ঘোরার জায়গা যার আকর্ষণীয় উপকরণ 'ওক ' গাছের ঘন অরণ্য এখানকার চমৎকার আবহাওয়া, এবং এখানকার বিশেষ কিছু জায়গা পর্যটকদের অন্যতম ঠিকানা হয়ে উঠেছে সোনালী 'ওক ' মোড়ানো শহর।  যার মেঝেতে বিছানো রয়েছে নরম ফুলের পাপড়ির শৈবাল যার উপর হাটতে বেশ সুন্দর এর শান্ত নির্জন পরিবেশ পর্যটকদের আকর্ষণ করে তুলেছে।  এখানকার অতি গুরুত্বপূর্ণ স্থান গুলি হলো –

১. গৌরীপুর হাউস

প্রধান শহর থেকে ৪ কিমি দক্ষিন পূর্বদিকে অবস্থিত গৌরীপুর হাউস, যার স্থানীয় নাম চিত্রাভানু। জানা যায়  বিশেষ কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এখানে বিশ্রাম নিতেন এবং কবিতা গল্প লিখতেন -

     "চির আমি

          সফল খেলায় করবে খেলা

  এই আমি"

এখানে কবি গুরু পদ চিহ্ন , এবং বাতাসে নিঃশাস প্রশাশ আজ ও বয়ে যায়।  ভ্রমণের জায়গা হিসাবে আপনি ও এই জায়গা কে বেছে নিতে পারবেন।

২. তিস্তা বাজার

কালিম্পং  এর অন্যতম হলো তিস্তা বাজার। এখানে বিভিন্ন প্রসাধনী সামগ্রী সস্তায় পাওয়া যায়।  ভ্রমণের অন্যতম আনন্দ হলো ভ্রমণ স্থানের সামগ্রী ক্রয় করা।  আপনি এখন থেকে বিভিন্ন জিনিস কিনে বাড়িতে আন্তে পারবেন।

৩. মরগ্যান হাউস

কালিম্পঙের বিশেষ ঐতিহাসিক বাংলো হলো "মরগ্যান হাউস" এই বাংলোটি ব্রিটিশরা স্থাপন করেছিলেন অনুমান করা হয়। 

৪. হনুমান মন্দির

কালিম্পং এর পাহাড়ের উপরে দেবী দুর্গার একটি ক্ষুদ্র মন্দির অবস্তিত যার সামনেরবাম  হস্তে একটি ত্রিশ ফুট উঁচু ধাতব লাল কাঠামো রঙের হনুমান নির্মিত।  এই বিশেষ মূর্তিটির জন্য এই স্থানটি বিখ্যাত।  এখন থেকে চারিদিকে হিমালয়ের অনুরূপ নৈস্বর্গ সৌন্দর্য বিরাজমান। পর্বতের নিস্তব্ধ পরিবেশ আর সোনালী পাইন বোনের স্তব্দতা ভক্তদের আসা যাওয়া বিশেষ ভাবে আকর্ষিত।

   তাছাড়া এখানকার অন্যান্য জনপ্রিয় স্থান গুলি হলো "রিশ-রিম্বিক",লোলেগাঁও ,ডেল পাহাড় ,রম ক্যাথলিক চার্চ ,ম্যাক ফারলেন চার্চ, সাইনসিটি , টাসোঙ্গা গুম্ফা ,লেপ্চা মিউজিয়াম, পাইনভিউ ,নার্সারি ইত্যাদি পর্যটক এর ভিড় এখানে জমায়েত হয়।





দীঘা

দীঘা হলো পূর্ব মেদিনীপুর জেলার একটি জনপ্রিয় সমুদ্র সৈকত। পশ্চিমবঙ্গের ঘোরার জায়গা এই সমুদ্রের উঁচু ঢেউ ও  মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশ পর্যটকদের মনে গেঁথে গিয়েছে।  এখানকার বিশেষ দর্শনীয় স্থানগুলি হলো –

১. অমরাবতী লেক

এখানে নৌকো ভ্রমণের সঙ্গে সঙ্গে  পার্শ্ববতি স্থানে একটি পার্ক ও একটি সাপ  উদ্যান অবস্থিত দেখার মতো।  এখানে আপনি আসলে বিভিন্ন প্রজাতির সাপ এর দেখা পাবেন।

২. জুনপুট

রাজ্য সরকারের নতুন উদ্যোগে  একটি মৎস্য দপ্তরের নাম দিয়েছে জুনপুট। এখানে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ চাষের জন্য বিখ্যাত। মনোরম সাজানো গুছানো  প্রকৃতি।  এখানে ভ্রমণ পিপাসু মানুষেরা এসে থাকে।

৩. মন্দারমণি

মন্দারমণি নাম মন্দার  ফুলের নাম অনুসারে রাখা হয়েছে। কাঁথি থেকে মাত্র ১২ কিমি দূরে অবস্থিত এই জায়গাটি। এখানে বাঙালি খাবারের পশে পেয়ে যাবেন চাইনিস খাবার।  তবে এখানে মাছের জন্য বিখ্যাত। আপনি যে কোনো মাছের আইটেম পেয়ে যাবেন।

  এছাড়া ও এখানকার বিশেষ স্থান গুলি হলো - চন্দ্রাবলী বিচ , তালসারি ঝাউবন , ঢেউ সাগর ,কাজল দীঘি ,বিশ্ব বাংলা পার্ক, ফিশ মার্কেট , চম্পা নদী ইত্যাদি দর্শনীয় স্থান এখানে এসে আপনি আনন্দ মনোরঞ্জন খুঁজে পাবেন।

 


দার্জিলিং

ভারতের পশ্চিমবঙ্গের ঘোরার জায়গা অন্যতম শীত প্রধান জেলা হলো দার্জিলিং। সমস্ত টাই পাহাড় পর্বত দিয়ে বিস্তৃত।  পাহাড় অনেক  উঁচু হওয়ায় মেঘ ঘেসে যায় তাই এর নাম মেঘের রাজ্য আবার পাহাড়ের রানী নাম খ্যাত। ভূ-পৃষ্ঠ থেকে এর উচ্চতা প্রায় ২০৪৫ মিটার। এই পর্বত গুলি হিমালয়ের বুকে জন্ম নিয়ে বেড়ে উঠেছে। এখানে মনোরম প্রকৃতির চা বাগানের জন্য বিখ্যাত। কাঞ্চন জঙ্গার সুন্দর মনোরম পরিবেশ এবং শীতকাল আসলেই অপরূপ সৌন্দর্যে সেজে ওঠে । 

এখানে নানারকম ফুলের গাছ ঢেউ খেলানো পর্বতের উপর সোনালী রোদে ঝিকিমিকি করে। দেশি বিদেশী পর্যটক অহরহ দেখা যায় আপনি ও এখানে বেড়িয়ে যেতে পারেন অতি স্বল্প খরচে।  বছরের শেষে কাজের ফাঁকে বিনোদনের জন্য শিক্ষক শিক্ষার্থী থেকে ছাত্র ছাত্রী সমাজের সব ধরণের মানুষ এখানে সময় কাটাতে আসে। কেবলমাত্র প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ছাড়া ও এখানে শিক্ষণীয় বিষয় আছে এখানকার মিজিয়াম গুলি শিক্ষার্থীদের বিশেষ আকর্ষণ করে। এখানকার প্রধান দর্শনীয় স্থান গুলি হলো –

১. বাতাসিয়া লুপ

দার্জিলিং এর অন্যতম রেলস্টেশন হলো বাতাসিয়া লুপ।  এই স্টেশনটি পাহাড়ের গা ঘেসে বৃত্তাকার , এই স্টেশন থেকে কাঞ্চনজঙ্গা কে দেখলে মনে হয়   কাঞ্চনজঙ্গা মাথার উপর মেঘ কে নিয়ে উজ্জ্বল হাসিতে ভরপুর।  যে দৃশ্য আপনি একবার দেখার সুযোগ হলে আজীবন ভুলতে পারবেন না। তাছাড়া নানারকম ফুলের গাছের মেলা সাজিয়ে গুছিয়ে উঠেছে। কম খরচে ঘোরার জায়গা ল্যান্ডস্কোপ আছে যার ভিতরের প্রবেশ  মূল্য ২০ রুপি নিয়ে প্রবেশ করানো হয় এটি  ভ্রমণ যাত্রীদের কাছে খুবই আকর্সনীয়।  সকাল ৫ টা থেকে সন্ধ্যা ৪ টা পর্যন্ত অনুমোদিত।

২. টাইগার হিল

দার্জিলিঙের ঘুম স্টেশনের সর্বোচ্চ বিন্দু হলো টাইগার হিল। এখান থেকে মাউন্ট এভারেস্ট এর দৃশ্য দেখলে মনে হয় রুপোলি মুকুট পরিহিত, দার্জিলিং খুব সুন্দর দৃশ্য উপভোগ করতে পারবেন।  এই এভারেস্ট এর বুক চিরে যে সমস্ত নদী গুলি বেয়ে গিয়েছে সেগুলি হলো তিস্তা, মহানন্দা , বালুসন , মোচি , এইনদী গুলি স্পষ্ট দেখা যায় এবং মনে হয় নীল রঙের শান্ত সাপ বেয়ে চলেছে।

৩. গোর্খা স্টেডিয়াম

দার্জিলিঙের লেবঙ্গে অবস্থিত একটি জনসাধারণ ক্রীড়হা প্রাঙ্গন যা ফুটবল ক্রিকেট ও সংষ্কৃতিক অনুষ্ঠানের জন্য বিখ্যাত।  এছাড়াও এটি দ্রষ্টব্যঃ স্থান গুলির মধ্যে অন্যতম।  একখানে প্রচুর পরিমানে পর্যটকের ভিড় হয় তার কারণ এখন থেকে খেলার মাঠটি দেখলে মনে হয় পাচিলের মতো ঘেরা।  এটি যেন পাহাড়ের কোলে শিশু দের খেলার জন্য সৃষ্টি , যেমন মায়ের কোলে বাচ্চা খেলা করে। 

এছাড়াও এখানকার আরো অনেক অজানা পর্যটন কেন্দ্র রয়েছে এগুলির মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য হলো - পাইন ঘেরা প্রেমের গ্রাম , লামাহাত্রা ,লেপচাজগৎ যেখানে লেপচাদের বসস্থান , আলপাইন ও নানা পাখিদের মেলার টিলুঞ্চি পাহাড়ি গ্রাম , ইত্যাদি

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url

Adsence

Adsence